।। সাত।। উচ্চ রক্তচাপঃ উপসর্গ ও জটিলতা




            উচ্চ রক্তচাপ একটি নীরব ঘাতক কারণ এটা মূলত একটি উপসর্গবিহীন রোগ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের তেমন কোন লক্ষণ-উপসর্গ থাকে না। দেখা যায় কোন সুস্থ স্বাভাবিক লোককেও যদি বলে দেওয়া হয় যে, তার উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে; তাহলে তিনি কিছুদিনের মধ্যেই কতগুলো উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসকের নিকট হাজির হন; যেমন-মাথা ধরা, ঘাড়ে ব্যথা, ঘাড়ের শিরা দপ দপ করা ইত্যাদি আবার একজন সত্যিকার উচ্চ রক্তচাপের রোগীকে যদি বলা হয় যে রক্তচাপ স্বাভাবিক রয়েছে, তাহলে তিনি খুব বেশী অসুবিধার কথা বলেন না, দিব্যি ঘুরে-ফিরে বেড়ান

        সুতরাং উচ্চ রক্তচাপের লক্ষন-উপসর্গ প্রকাশ পাওয়ার পরে কেউ যদি এটা চিকিৎসা করানোর আশা করে, তাহলে জীবনের সঙ্গে সেটা একটা কঠিন বাজি হয়ে যাবে। এজন্য প্রত্যেককে তার রক্তচাপের সংখ্যা দুটি জানতে হবে। অনেকে মনে করে উচ্চ রক্তচাপ হলে অস্থির লাগবে, ঘাম হবে, ঘুম কম হবে, চোখমুখ লাল হয়ে যাবে ইত্যাদি। কিন্তু বেশীর ভাগ উচ্চ রক্তচাপের রোগীদেরই এমন কিছু হয় না।

         উনবিংশ শতকের শুরুর দিকে অনেকেই মনে করতেন উচ্চ রক্তচাপ হলে মাথা ব্যথা হয়। কিন্তু এখন আমরা জানি মারাত্মক উচ্চ রক্তচাপ ছাড়া এরকম মাথা ব্যথা হয় না। কয়েকটি পর্যবেক্ষণে বরং দেখা যাচ্ছে উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের মাথা ব্যথা তুলনামূলকভাবে কম হয়ে থাকে। অনেকে নাক দিয়ে রক্তপড়াকে উচ্চ রক্তচাপের একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ মনে করেন। কিন্তু বিভিন্ন পর্যবেক্ষণে দেখা যায় জরুরী বিভাগে যত রোগী নাক দিয়ে রক্ত পড়ার লক্ষণ নিয়ে আসে, তাদের মধ্যে মাত্র ১৭% রোগীর মারাত্মক উচ্চ রক্তচাপ থাকে। বাকী ৮৩% রোগীর এরকম কোন ইতিহাস থাকে না।  আরও অনেক কারণে নাক থেকে রক্ত পড়তে পারে। সে জন্য নাক থেকে রক্ত পড়লে অন্যান্য কারণ সমূহের কথাও আমাদের বিবেচনায় রাখতে হবে।    
         
          রক্তচাপের মাত্রা খুব বেড়ে গেলে অবশ্য নানারকম উপসর্গ দেখা দিতেই পারে। এরকম অবস্থাকে উচ্চ রক্তচাপজনিত সঙ্কট বা hypertensive crisis বলা হয়। সাধারণত এসকল ক্ষেত্রে রোগীর তীব্র মাথা ব্যথা হয়, রোগী প্রচণ্ড অস্থির বোধ করে, শ্বাসকষ্ট হয় এবং নাক থেকে রক্ত ক্ষরণ হতে পারে। রক্তচাপ ১৮০/১১০ মিঃ মিঃ পারদচাপের ওপরে উঠলে এই রকম অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে।  
   
            উচ্চ রক্তচাপের ফলে বিভিন্ন জটিলতা এবং ক্ষয় ক্ষতি শুরু হলেও রোগী নানা রকম  উপসর্গের কথা বলতে পারে অনেকেই শ্বাস কষ্টের অভিযোগ করে প্রথম দিকে হাঁটা-চলা করার ফলে, পরে বসে থাকা অবস্থায়ও শ্বাস কষ্ট হতে পারে অনেকের মাঝ রাতে শ্বাস কষ্টের জন্য ঘুম ভেঙে যায়; কিন্তু উঠে বসে থাকলে কিংবা দাঁড়ালে উপশম হয় এগুলো আসলে হৃদপিণ্ডের বিকলতা বা  heart failure- এর উপসর্গ উচ্চ রক্তচাপ হৃদবিকলতার একটি প্রধান কারণ এছাড়া করোনারী ধমনীতে রক্ত চলাচল ব্যাহত হলে বুকে ব্যাথা হয় যা অ্যানজাইনা (Angina) নামে পরিচিত উচ্চ রক্তচাপের কারণে অ্যানজাইনা হওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়  

                   মস্তিস্কে রক্ত প্রবাহে বিঘ্ন হলে কিংবা রক্ত নালী ছিঁড়ে গেলে স্ট্রোক (Stroke) বা পক্ষাঘাত হতে পারে উচ্চ রক্ত চাপের ফলে চোখের রেটিনাও ক্ষতিগ্রস্থ হয় এর ফলে চোখে দেখতে অসুবিধা হয় উচ্চ রক্তচাপের ফলে মস্তিস্কে অতিরিক্ত পানি জমে এনসেফালোপ্যাথি (Encephalopathy) হয় এর জন্য খিঁচুনি হতে পারে এবং রোগী অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে কিডনি ক্ষতিগ্রস্থ    হওয়ায় রক্ত শূন্যতা , সহজেই ক্লান্ত হয়ে পড়া , বমি বমি ভাব, বমি হওয়া, হাত পা ফুলে যাওয়া, এমন কি অজ্ঞান হয়ে যাওয়া প্রভৃতি উপসর্গ দেখা দিতে পারে  

সারণী-৬    উচ্চ রক্তচাপের ফলে ক্ষতিগ্রস্থ অঙ্গসমূহের সমস্যা
অঙ্গসমূহ
রোগ
হৃদপিণ্ড
বাম নিলয়ের অতিবৃদ্ধি

অ্যানজিনা এবং অন্যান্য করোনারি হৃদরোগ

হৃদপিণ্ডের অ্যানজিওপ্লাস্টি কিংবা বাই পাস

হৃদপিণ্ডের বিকলতা
মস্তিস্ক
মস্তিস্কে রক্ত প্রবাহে সাময়িক বিরতি

স্ট্রোক বা পক্ষাঘাত
কিডনি
দীর্ঘ মেয়াদী কিডনির সমস্যা
রক্ত নালী
বাহ্যিক রক্ত নালীর সমস্যা
রেটিনা
রেটিনোপ্যাথি
 সূত্রঃ জয়েন্ট ন্যাশনাল কমিটির সপ্তম রিপোর্ট,২০০৩



1 comment:

  1. i am 22 years old.i am not fat also my weight is 64. i am like an ordinary person i think but not from others.my blood pressure is high like 150-100.this is my regular blood pressure.i feel always my head is engage with something but i really don't know whats that about.in this age is it normal?i don;t think so.what should i do?i am feeling depress..if u can reply my question.please help me out of this.....thanks for reading.

    ReplyDelete