।।পনেরো।। বার্ধক্যে উচ্চ রক্তচাপ



 
          সামগ্রিকভাবে মানুষের গড় আয়ু বেড়ে যাওয়ার ফলে বুড়ো বয়সে উচ্চ রক্তচাপ একটি স্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে দেখা দিচ্ছে সম্প্রতি ৬৫ বছর কিংবা তার চেয়ে বেশী বয়সী মানুষের ওপর কয়েকটি বড় পর্যবেক্ষণ সম্পন্ন হওয়ার ফলে এ সম্পর্কে নতুন দিক নির্দেশনা পাওয়া যাচ্ছে এর ফলে বার্ধক্যে উচ্চ রক্তচাপের সংজ্ঞা, রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসা পদ্ধতিতে অনেক পরিবর্তন আসছে  

          ২০০৩ সালে প্রবীণদের উচ্চ রক্তচাপ নির্ণয়ের নতুন মাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে অনেক দেশে এ সম্পর্কে বিতর্ক থাকলেও সপ্তম মার্কিন জয়েন্ট ন্যাশনাল কমিশনের রিপোর্টে ১৮ বছরের ওপর যাদের বয়স, তাদের সকলের উচ্চ রক্তচাপ নির্ণয়ের একটি সমন্বিত সিদ্ধান্ত প্রস্তাব করা হয়েছে সে অনুসারে কারও সিস্টোলিক রক্তচাপ ১৪০ মিঃ মিঃ পারদ চাপের বেশী হলেই তার উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে বলে গণ্য করা হয় এ ক্ষেত্রে মৃদু, মাঝারী এবং তীব্র উচ্চ রক্তচাপের ধারণা পালটে পর্যায় বা স্টেজিং পদ্ধতি চালু করা হয়েছে সকলেই এ পদ্ধতি পরিবর্তনের প্রশংসা করেছেন কারণ মৃদু উচ্চ রক্তচাপ (Mild hypertension) বললে অনেক রোগীই বিভ্রান্ত হন এবং বৃথা আশ্বস্ত বোধ করেন উচ্চ রক্তচাপ মাত্রই  ¯^v‡¯’¨i  জন্য হুমকি- তা মৃদুই হোক আর তীব্রই হোক  

          বৃদ্ধদের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপের প্রকোপ কেমন? ১৯৮৮ সাল থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত এক মার্কিন সমীক্ষায় দেখা যায়, ৬৫ থেকে ৭৪ বছর বয়সীদের ৫৪% উচ্চ রক্তচাপে ভুগছে কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে এ হার আরও বেশী - ৭২% আমাদের দেশে প্রবীণদের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপের হার কেমন সে সম্পর্কে এখনও কোন সমীক্ষা হয়নি
সাধারণত তিন ধরণের হয়ে থাকেঃ
1.      শুধু সিস্টোলিক  উচ্চ রক্তচাপ
2.     শুধু ডায়াস্টোলিক রক্তচাপের আধিক্য
3.     সিস্টোলিক  ও ডায়াস্টোলিক উভয় রক্তচাপই বেশী  

          অধিকাংশ প্রবীণ মানুষের শুধু সিস্টোলিক  রক্তচাপ  ( isolated systolic hypertension) বেশী থাকে আগে সিস্টোলিক  রক্তচাপ ১৬০ মিঃ মিঃ পারদ চাপের বেশী হলে তাকে উচ্চ রক্তচাপ হিসেবে গণ্য করা হতো কিন্তু এখন সিস্টোলিক  রক্তচাপ ১৪০ মিঃ মিঃ পারদচাপের বেশী হলেই তা উচ্চ রক্তচাপ হিসেবে গণ্য করা হয় নতুন মাত্রা অনুসারেও ৬০ বছরের বেশী বয়সী ৬৫% মানুষের উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে বলে মার্কিন সমীক্ষায় জানা যায়

          কম বয়সীদের জন্য উচ্চ রক্তচাপ যেমন ঝুঁকিপূর্ণ, বয়স্কদের জন্য তা আরও বেশী ঝুঁকিপূর্ণ  এর ফলে প্রবীণদের স্ট্রোক এবং হৃদপিণ্ডের বিকলতা বেশী হয় এছাড়া অন্যান্য হৃদরোগ, কিডনির বিকলতা এবং রক্তনালীর সমস্যা সৃষ্টি করে আরও উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে ডায়াস্টোলিক উচ্চ রক্তচাপের মতো শুধু সিস্টোলিক উচ্চ রক্তচাপও বয়স্কদের জন্য সমান বিপজ্জনক  

প্রবীণদের উচ্চ রক্তচাপের চিকিৎসা করলে সুফল পাওয়া যায় এ বিষয়ে এখন আর তেমন কোন দ্বিমত নাই ১৯৯২ সালে ব্রিটেনে মেডিক্যাল রিসার্চ কাউন্সিল চার হাজারের উপর প্রবীণের ওপর সমীক্ষা করে এর সুফল প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে অন্য আরও কতগুলি পর্যবেক্ষণের সাহায্যে ৬৫ থেকে ৮৪ বছর বয়সীদের উচ্চ রক্তচাপের চিকিৎসা করলে যে উপকার হয় তা প্রমাণিত হয়েছে এর ওপরে যাদের বয়স তাদের উচ্চ রক্তচাপ কমানোর জন্য ওষুধ ব্যবহার করলে ফলাফল কি হয় সে সম্পর্কে এখনও তেমন পরিস্কার কোন তথ্য নেই প্রবীণদের কিডনি এবং লিভারের কার্যক্ষমতা যেহেতু যৌবনের তুলনায় অনেক কমে যায়; এজন্য তাদের ওষুধ দেওয়ার সময় অনেক বিচার বিবেচনার প্রয়োজন রয়েছে ওষুধের পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়ার সম্ভাবনাও প্রবীণদের বেলায় অনেক বেশী সুতরাং উপযুক্ত চিকিৎসকের নিয়মিত তত্ত্বাবধানে প্রবীণদের উচ্চ রক্তচাপের চিকিৎসা করান উচিৎ


No comments:

Post a Comment