।। নয়।। উচ্চ রক্তচাপ ও কিডনি




          আমাদের শরীরে দুটো কিডনি কাজ করে নীরবে কিডনি দুটোকে কল্পনা করা যায় শরীরের ছাঁকনি হিসেবে বেঁচে থাকার জন্য অক্সিজেন, খাবার আর পানির দরকার এগুলিকে কাজে লাগিয়ে দেহ শক্তি তৈরি করে, কোষের পুষ্টি যোগায়; কিন্তু এ প্রক্রিয়ায়  আমাদের দেহের জন্য দরকারী নয় এমন অনেক আবর্জনাও তৈরি হয় কিডনি রক্ত থেকে এ সকল বর্জ্য পদার্থ ছেঁকে প্রস্রাবের সঙ্গে বের করে দেয় এবং রক্তকে বিশুদ্ধ রাখে এ ছাড়া শরীরে পানির ভারসাম্য রক্ষা করা, রক্তের ক্ষারত্ব ঠিক রাখাসহ কিডনি আরও নানারকম জটিল কাজ করে থাকে কিন্তু অনেক জটিল অসুখের টার্গেট এই কিডনি যেমনঃ অনেকদিন কারও ডায়াবেটিস রোগ থাকলে তার কিডনি নষ্ট হয়ে যাওয়ার ভয় থাকে তেমন অনেকদিন কেউ উচ্চ রক্তচাপে ভুগলেও তার কিডনির জটিলতা দেখা দিতে পারে তবে মনে রাখা দরকার যে, উচ্চ রক্তচাপের ফলে যেমন কিডনির সমস্যা সৃষ্টি হয়; তেমন অনেক কিডনির রোগের ফলেও কিন্তু উচ্চ রক্তচাপ সৃষ্টি হতে পারে অর্থাৎ উচ্চ রক্তচাপ এবং কিডনি অঙ্গাঙ্গিভাবে সম্পর্কিত  

          স্বাভাবিক অবস্থায় রক্তচাপ বাড়লেই কিডনির ভেতরে রক্তপ্রবাহের ধারা পরিবর্তিত হয় এবং সোডিয়াম রেচনে প্রভাব পড়ে নিয়মিত উচ্চ রক্তচাপের ক্ষেত্রে কিডনির কাজের ধরণ পালটে যায় অবশ্য উচ্চ রক্তচাপে ভুগছে এমন পিতামাতার সন্তানদের কিডনির কাজেও বেশকিছু অস্বাভাবিকতা দেখতে পাওয়া যায় এজন্য অনেকে ধারণা করা হয় উচ্চ রক্তচাপ পেছনে কিডনির বিশেষ ভূমিকা রয়েছে মারাত্মক উচ্চ রক্তচাপ বেশীদিন স্থায়ী হলে কিডনির বিকলতা (renal failure) দেখা দিতে পারে অবশ্য মৃদু উচ্চ রক্তচাপের ফলে কিডনির বিকলতা সৃষ্টি হয় কিনা তা প্রশ্ন সাপেক্ষ

          সাধারণত কিডনির কোন রোগের ফলে যে উচ্চ রক্তচাপ সৃষ্টি হয় তাকে সেকেন্ডারি উচ্চ রক্তচাপ বলে নেফ্রাইটিস বা কিডনির প্রদাহ, পলি সিস্টিক কিডনি কিংবা রেনাল আর্টারি স্টেনো সিস থাকলে এ ধরণের উচ্চ রক্তচাপ হতে দেখা যায় তবে এগুলির মধ্যে নেফ্রাইটিসের কারণেই বেশী উচ্চ রক্তচাপ হয়ে থাকে স্ট্রেপ্টোকক্কাস বিটা হিমলাইটিকাস নামে পরিচিত ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের ফলে টনসিলের যে প্রদাহ হয় কিংবা শরীরে খোস পাঁচরা ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সংক্রমিত হলে গ্লোমেরুলো-নেফ্রাইটিস হওয়ার সম্ভাবনা থাকে কানেক্টিভ টিস্যুর রোগ, সন্ধিবাত এবং আরও অনেক রোগের কারণেও নেফ্রাইটিস হতে দেখা যায় যে কারণে গ্লোমেরুলো-নেফ্রাইটিস হোক না কেন এর ফলে কিডনির স্বাভাবিক কাজ কর্ম ব্যাহত হয়, শরীরে বিভিন্ন বর্জ্য পদার্থ জমতে থাকে রোগীর প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যায়, প্রস্রাবে রক্তকোষ নির্গত হয় বলে প্রস্রাবের রঙ গাঢ় লাল বা ধোঁয়াটে হতে পারে এবং মুখ-হাত-পা ফুলে যায় ক্রমশ রক্তচাপ বাড়তে থাকে এবং তা মারাত্মক উচ্চ রক্তচাপে পরিণত হতে পারে রক্তে ইউরিয়া-ক্রিয়াটিনিনের মাত্রা বাড়তে থাকে উপযুক্ত চিকিৎসা না হলে এর ফলে নান রকম জটিলতা সৃষ্টি হয় যেমনঃ হৃদবিকলতা (heart failure),উচ্চ রক্তচাপজনিত এনসেফালোপ্যাথি(hypertensive encephalopathy), কিডনির বিকলতা(renal failure) ইত্যাদি অর্থাৎ সামান্য টনসিলের সমস্যা কিংবা চর্মরোগের লক্ষণ নিয়ে শুরু হলেও গ্লোমেরুলো-নেফ্রাইটিসের ফলে শেষ পর্যন্ত হৃদপিণ্ড ও মস্তিস্কের সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে এবং সঠিক চিকিৎসা না হলে গুরুতর পরিণতি ডেকে আনে

          পলিসিস্টিক কিডনি  তুলনামূলকভাবে বিরল জন্মগত ত্রুটি এই অসুখে কিডনিতে ছোট ছোট সিস্ট বা গুটি থাকে ছোট বেলায় সাধারণত এর কোন লক্ষণ বা উপসর্গ প্রকাশ পায় না তবে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সিস্টের সংখ্যা এবং আকার বাড়তে থাকে এবং নানা রকম সমস্যা সৃষ্টি হতে থাকে  কারও কারও উচ্চ রক্তচাপ হতে পারে রেনাল ধমনীতে আথেরোস্ক্লেরোসিস কিংবা জন্মগত ত্রুটি থাকলে  রেনাল আর্টারি স্টেনোসিস হয় এদেরও উচ্চ রক্তচাপসহ নানা রকম জটিলতা হতে পারে    

          ডায়াবেটিস, গ্লোমেরুলো-নেফ্রাইটিস, কিডনির ইনফেকশন কিংবা অন্য যে কোন কারণে ক্রনিক রেনাল ফেইলিউর(chronic renal failure) হলেও সাধারণত রক্তচাপ বেড়ে যায়  প্রাথমিক উচ্চ রক্তচাপ দীর্ঘদিন স্থায়ী হলেও কিডনির বিকলতা হতে পারে তা আগেই বলা হয়েছে এদের প্রধান উপসর্গ রক্ত স্বল্পতা (anaemia) এ ছাড়া মুখ-হাত-পা ফুলে যেতে পারে ক্ষিধে কমে যায়, বমি বমি ভাব কিংবা বমি হয় প্রস্রাবের নানা রকম সমস্যা হয়; প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত এবং প্রোটিন বের হয়ে যেতে পারে রক্তচাপ বেড়ে যাওয়ার ফলে হৃদপিণ্ড, চোখ, মস্তিস্ক ইত্যাদিসহ শরীরের অন্যান্য অঙ্গে সমস্যা দেখা দেয় প্রথম থেকে চিকিৎসা শুরু না করলে ওষুধপত্র দিয়ে কিডনি ঠিক রাখা দায় হয়ে পড়ে তখন ডায়ালাইসিস কিংবা কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট করতে হয় কিন্তু এ ধরণের চিকিৎসা জটিল এবং ব্যয়বহুল
          সুতরাং উচ্চ রক্তচাপ থেকে কিডনির সমস্যা হোক কিংবা কিডনি রোগ থেকে উচ্চ রক্তচাপ হোক উভয় ক্ষেত্রেই প্রথম থেকে রোগী এবং চিকিৎসককে সতর্ক থাকতে হবে প্রয়োজনে এর জন্য উপযুক্ত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে   



No comments:

Post a Comment