শিল্পায়ন এবং নগরায়নের ফলে এখন উচ্চ রক্তচাপ, বহুমূত্র ,
ক্যানসার প্রভৃতি রোগ আমাদের সামনে বড় স্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছে। এসব সমস্যা
আরও বাড়বে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এরই মধ্যে জানিয়েছে যে, তৃতীয়
বিশ্বে উচ্চ রক্তচাপ মহামারী আকারে দেখা দিয়েছে।
১৯৯০ সালের আগে উচ্চ রক্তচাপের
প্রকোপ কমে যাওয়ার একটি প্রবণতা দেখা যাচ্ছিল। ১৯৮০ সালে বিশ্ব ব্যাপী উচ্চ রক্তচাপের রোগী ছিল ৬০০ মিলিয়ন। কিন্তু জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং
প্রবীণদের সংখ্যা বাড়ার ফলে বর্তমান পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে উচ্চ রক্তচাপের
প্রকোপ বেড়ে চলেছে। ২০০৮ সালে বিশ্ব ব্যাপী ১০০০ মিলিয়ন মানুষ উচ্চরক্তচাপে আক্রান্ত ছিল । ওই সময়ে ২৫ বছর বয়সের ওপরে ৪০% মানুষ
উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত ছিল। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেবে প্রতি বছর উচ্চ রক্তচাপের জন্য ৭.৫ মিলিয়ন মানুষ মৃত্যু
বরণ করে। এটা সকল মৃত্যুর ১২%। ১৯৯৯- ২০০২ সালের মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে
২৯% মানুষ উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত ছিল। বয়স, লিঙ্গ, জাতি এবং শারীরিক গঠন ভেদে প্রতি বছর ৩-১৮% নতুন উচ্চ
রক্তচাপের রোগী শনাক্ত হচ্ছে।
উচ্চ রক্তচাপ বিশ্বব্যাপী হৃদরোগের এবং স্ট্রোক বা পক্ষাঘাতের প্রধান কারণ। কারও রক্তচাপ ১১৫/৭৫ মিঃমিঃ পারদ চাপ থেকে প্রতি ২০/১০ মিঃমিঃ পারদ চাপ বাড়ার জন্য হৃদরোগের প্রকোপ দ্বিগুণ বেড়ে যায়। হৃদরোগ
ছাড়া উচ্চরক্তচাপের কারণে হৃদ বিকলতা , রক্তনালীর বিভিন্ন রোগ, কিডনির সমস্যা এবং চোখে রেটিনার সমস্যাও বেড়ে যায়। কিন্তু রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে এ সকল জটিলতা সহজেই কমানো যায়। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও মাত্র প্রতি তিন জনে এক জন রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে।
বাংলাদেশে উচ্চ রক্তচাপের বিস্তৃতি
বাংলাদেশে জাতীয় পর্যায়ে উচ্চ রক্তচাপের রোগীর
সংখ্যা রেকর্ড করার কোন ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। এ সম্পর্কে
তেমন ব্যাপকভিত্তিক গবেষণাও হয়নি। ফলে বাংলাদেশের উচ্চ রক্তচাপের রোগীর কোন সঠিক হিসেব পাওয়া যায় না। এ সম্পর্কে বিভিন্ন ছোট খাটো কতগুলি
পর্যবেক্ষণে যে ফলাফল পাওয়া যায় তা জাতীয় পরিস্থিতির প্রতিফলন কি না সে সম্পর্কে
প্রশ্ন করার অবকাশ রয়েছে।
সচিবালয়ে কর্মচারীদের ওপর পরিচালিত একটি জরীপে
উচ্চ রক্তচাপের হার পাওয়া গিয়েছে ১৩.৬% । বিদেশে যেতে
ইচ্ছুক ১০,০০০ লোকের ওপর জরীপ করে উচ্চ রক্তচাপের হার পাওয়া গিয়েছে ২২.৪৬% । হাসপাতালের
৫৯৬ জন কর্মচারীর ওপর পর্যবেক্ষণ করে উচ্চ রক্তচাপের হার পাওয়া গিয়েছে ১২.৭৫% । আর পরিবহণ
শ্রমিকদের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপের হার ১২.৫২%।
গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে পরিচালিত জরীপে দেখা
গিয়েছে ৬.৭% লোকের ডায়াস্টো লিক রক্তচাপ ৯০ মিঃ মিঃ পারদচাপের ওপরে। চট্টগ্রাম
মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ১৯৭৭ থেকে ১৯৮১ সালের পরিসংখ্যানে দেখা যায় ভর্তি
রোগীদের ১০.১৭%-এর উচ্চ রক্তচাপ ছিল। সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজে এ হার
১১.৯%।
সারণী-২ বাংলাদেশে উচ্চ রক্তচাপ
গবেষক
|
পর্যবেক্ষণকৃত লোক
সংখ্যা
|
উচ্চ রক্তচাপের হার
|
ইসলাম ও অন্যান্য
|
৭৯৭২
|
১৩.৬%
|
চৌধুরী ও অন্যান্য
|
১০,০০০
|
২২.৪৬%
|
চৌধুরী ও অন্যান্য
|
৫৯৬
|
১২.৭৫%
|
বণিক ও অন্যান্য
|
২২৮
|
১০.৫২%
|
সারণী-৩ গ্রামীণ বাংলায় উচ্চ রক্তচাপ
গবেষক
|
পর্যবেক্ষণকৃত লোক
সংখ্যা
|
উচ্চ রক্তচাপের হার
|
ইসলাম ও অন্যান্য
|
৫০২৬
|
৬.৭৯%
|
দাশের কান্দি
প্রজেক্ট
|
১১৮১
|
৫.২%
|
সারনি-৪ হাসপাতালে উচ্চ রক্তচাপ
গবেষক
|
উচ্চ রক্তচাপের হার
|
চট্টগ্রাম
মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল
কমর উদ্দিন ও
অন্যান্য
|
১০.১৭%
|
এম এ জি ওসমানী
মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল
লতিফ ও মোল্লা
|
১১.৯%
|
২০১২ সালের হিসেবে বাংলাদেশে ১৮ বছরের ওপরের
বয়সীদের আনুমানিক ২০% উচ্চরক্তচাপে ভোগে এবং যাদের বয়স ৫৫ বছরের ওপরে তাদের মধ্যে
উচ্চরক্তচাপের হার ৪০-৬৫%।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এপ্রিল ২০১১-র তথ্য অনুসারে বাংলাদেশে প্রতিবছর
শুধু উচ্চ রক্তচাপের জন্য ১৮,০০০-এর বেশী লোক মৃত্যু বরণ করে। কিন্তু উচ্চ
রক্তচাপের জটিলতার জন্য হৃদরোগ এবং অন্যান্য কারণে মৃত্যু হার অনেক বেশী।
No comments:
Post a Comment