উচ্চ রক্তচাপ যদি একটা রোগ হয় তাহলে এর কারণ থাকা উচিৎ। কিন্তু অনেক রোগের মতো
এর কারণ তেমন স্পষ্ট নয়। বিজ্ঞানীগণ তাই পরিবেশ আর বংশগতির লতায়-পাতায় আতি-পাতি করে
খুঁজে ফিরছেন উচ্চ রক্তচাপের আসল কারণ বের করার জন্য। কাজটি তেমন সহজ নয়। উচচ রক্তচাপের ওপর
বংশগতির প্রভাব দেখাতে হলে যে সকল তথ্য- প্রমাণ দরকার তা এখনও জোরালো নয়। কারণ এর জন্য কোন
বিশেষ জিনকে দায়ী করা হচ্ছে না।
জিন হচ্ছে একখন্ড ডি এন এ । বংশগতির বাহক ক্রোমোজোম মূলত
অসংখ্য ডি এন এ অণু দিয়ে তৈরি। অনেক বংশগত রোগের জন্য ক্রোমোজোমের সংখ্যাগত কিংবা গাঠনিক ত্রুটি দায়ী । উদাহরণস্বরূপ বলা যায়
সেক্স ক্রোমোজোমের ত্রুটির জন্য হিমোফিলিয়া রোগ হয়। হিমোফিলিয়ার রোগীদের
রক্ত সহজে জমাট বাঁধতে চায় না। ফলে রোগীদের ভোগান্তির সীমা থাকে না। সামান্য দাঁত তুললে কিংবা
গিরায় আঘাত পেলে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। মেয়েরা হিমোফিলিয়ার ত্রুটিপূর্ণ ক্রোমোজোমের বাহক হলেও মূলত ছেলেদের
ক্ষেত্রেই এ রোগের লক্ষণ প্রকট আকারে ধরা পড়ে। হিমোফিলিয়া যে অর্থে বংশগত রোগ , উচ্চ রক্তচাপ তেমন কোন
বংশগত রোগ নয়। কিন্তু
যেহেতু পরিবারে বাবা-মায়ের উচ্চ রক্তচাপ থাকলে ছেলেমেয়েদেরও উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার
প্রবণতা দেখা যায় সে জন্য অনেকে এর পেছনে বংশগতির ভূমিকা রয়েছে মনে করেন
। ইতোমধ্যে রক্তচাপকে প্রভাবিত করতে পারে এমন কিছু জিন মানুষ এবং অন্যান্য
প্রাণীর দেহে বিজ্ঞানীগণ প্রাথমিকভাবে শনাক্ত করেছেন । আগামী কয়েক বছরে
এগুলোর সংখ্যা হয়তো আরও বাড়বে। কিন্তু এ সকল আবিস্কারের মূল্য এখনও তত্ত্বগত পর্যায়ে সীমিত। ভবিষ্যতে হয়তো এসব
জিনের উপস্থিতির ভিত্তিতে কাদের উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার প্রবণতা রয়েছে তা নির্ধারণ করা
যাবে এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে।
সম্প্রতি একটি পর্যবেক্ষণে দেখা যাচ্ছে উচ্চ রক্তচাপ
প্রকাশের বেলায় ৩০% ক্ষেত্রে বংশগতির ভূমিকা রয়েছে। পুরুষদের ক্ষেত্রে এটি বেশী
প্রযোজ্য। মহিলাদের ক্ষেত্রে বংশগতির ভূমিকা থাকলেও, পরিবেশের প্রভাবই বেশী
পরিলক্ষিত হয়েছে।
প্রকৃতপক্ষে এখন পর্যন্ত উচ্চ রক্তচাপ সৃষ্টির পেছনে পরিবেশগত উপাদানের
বিশেষ ভূমিকা রয়েছে বলে বিশেষজ্ঞগণ মনে করেন। উচ্চ রক্তচাপের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে
এটাও বাড়ে। কিন্তু
বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মধ্যে এ বিষয়ে বেশ বড়
রকমের পার্থক্য দেখা যায়। এজন্য পরিবেশগত উপাদানকে উচ্চ রক্তচাপের একটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক মনে করা
হয়। অতিরিক্ত ক্যালরি
গ্রহণ ( পরিণামে মেদ-ভুঁড়ি হওয়া), বেশী লবণ খাওয়া, কম পটাশিয়াম গ্রহণ, শারীরিক
পরিশ্রম না করা, প্রচুর শরাব পান করা এবং মানসিক দুশ্চিন্তা এগুলি উচ্চ রক্তচাপ সৃষ্টির পেছনে বিশেষ ভূমিকা
রাখে বলে মনে করা হয়। এ সকল পরিবেশগত উপাদানের সঙ্গে বংশগত উপাদানের মিথস্ক্রিয়াকে গুরুত্ব
দেওয়া হয়েছে।
No comments:
Post a Comment