।।দুই।। উচ্চ রক্তচাপ কি

                
রক্ত কোষের জন্য পুষ্টি, অক্সিজেন এবং আরও অনেক প্রয়োজনীয় উপাদান বয়ে নিয়ে যায় কিন্তু শুধু তা বয়ে নিয়ে গেলেই হয় না, কোষে যেসব বর্জ্য পদার্থ এবং কার্বন ডাই-অক্সাইড তৈরি হয় সেগুলিকে ফিরিয়েও আনতে হয় এজন্য শরীরের ভেতরে অবিরত রক্ত প্রবাহের একটি জটিল প্রক্রিয়া গড়ে উঠেছে  আর এ প্রবাহকে চালু রাখার মধ্যমণি হৃদপিণ্ড   হৃদপিণ্ডের প্রতিবার সংকোচনের ফলে বাম নিলয় থেকে রক্ত মহাধমনী দিয়ে শরীরের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে; প্রসারণ বা ডায়াস্টোলের সময় কার্বন ডাই অক্সাইড সমৃদ্ধ রক্ত হৃদপিণ্ডে ফিরে আসে রক্ত প্রবাহিত হওয়ার সময় ধমনীর গায়ে যে পার্শ্ব চাপ প্রয়োগ করে তাকে রক্তচাপ বলা হয় হৃদপিণ্ড সবেগে রক্ত পাম্প করার ফলে এই চাপ  সৃস্টি হয় এই চাপ  সৃস্টি না হলে রক্ত হৃদপিণ্ড থেকে দূরে কোষ-কলায় পৌঁছাতে পারতো না স্বাভাবিক অবস্থায় ধমনীর দেওয়াল নমনীয় এজন্য রক্তের চাপ বেশী হলে এটি সম্প্রসারিত হয়; আবার চাপ কমে গেলে সংকুচিত হয় হৃদপিণ্ড যতবার সংকুচিত হয় ততবার ধমনীর মধ্যে রক্তচাপ বাড়ে এটাকে বলা হয় সিস্টোলিক রক্তচাপ আবার সংকোচনের পড়েই হৃদপিণ্ড যখন সম্প্রসারিত হয় তখন রক্তচাপ কমে যায় এটাকে বলা হয় ডায়াস্টোলিক রক্তচাপ  সুতরাং কারও রক্তচাপ মাপলে দুটো চাপই মাপতে হয় এবং মিলিমিটার পারদ চাপ হিসেবে প্রকাশ করা হয় যেমন একজনের রক্তচাপ ১২০/৮০ মিঃ মিঃ পারদ চাপ এখানে ১২০ সিস্টোলিক রক্তচাপ আর ৮০ ডায়াস্টোলিক রক্তচাপ
সকলের রক্তচাপ এক রকম নয় এমন কি একই ব্যক্তির রক্তচাপ সব সময় এক রকম থাকে না দিনের বিভিন্ন সময়ে রক্তচাপ বাড়া-কমা করে শারীরিক পরিশ্রম করলে কিংবা উত্তেজনা হলে রক্তচাপ বেড়ে যায় চা- কফি পান করলে কিংবা ধূমপানের পরেও রক্তচাপ বাড়ে দিনের বিভিন্ন সময়ে রক্তচাপ বাড়া-কমা করে শারীরিক পরিশ্রম করলে কিংবা উত্তেজনা হলে রক্তচাপ বেড়ে যায় বিশ্রাম নিলে কিংবা ঘুমালে রক্তচাপ কমে যায় মানসিক অবস্থাভেদে দিনের বিভিন্ন সময়ে রক্তচাপের এই তারতম্য সাময়িক এবং স্বাভাবিক একটি প্রক্রিয়া  
বয়স এবং লিঙ্গভেদেও রক্তচাপের কিছু কম বেশী হয় ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের রক্তচাপ কম পাওয়া যায় বয়সের সঙ্গেও রক্তচাপের একটি ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে সাধারণত বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রক্তচাপ বাড়তে থাকে সিস্টোলিক রক্তচাপ বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে কিন্তু ডায়াস্টোলিক রক্তচাপ সে হারে বাড়ে না
অবশ্য রক্তচাপ কত বেশী হলে উচ্চ রক্তচাপ বলা হবে তা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে ২০০৩ সালে উচ্চ রক্তচাপ নির্ণয় , মূল্যায়ন এবং চিকিৎসার ওপর মার্কিন জয়েন্ট ন্যাশনাল কমিটির ৭ম রিপোর্টে উচ্চ রক্তচাপের পর্যায় সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে এই রিপোর্ট অনুসারে কারও সিস্টোলিক রক্তচাপ ১২০ মিঃ মিঃ পারদ চাপ এবং ডায়াস্টোলিক রক্তচাপ ৮০ মিঃ মিঃ পারদচাপের কম হলে  এটাকে স্বাভাবিক রক্তচাপ হিসেবে গণ্য করা হয়

সারনী-১ উচ্চ রক্তচাপের শ্রেণী বিন্যাস
(যাদের বয়স ১৮ বছর কিংবা তার ওপরে)
উচ্চ রক্তচাপের শ্রেণী
সিস্টোলিক রক্তচাপ
(মিঃমিঃ পারদ চাপ)
ডায়াস্টোলিক রক্তচাপ
(মিঃমিঃ পারদ চাপ)
স্বাভাবিক রক্তচাপ
< ১২০
 এবং < ৮০
প্রাক-উচ্চরক্তচাপ
(Pre-hypertension)
১২০-১৩৯
 অথবা ৮০-৮৯
পর্যায়- ১ উচ্চরক্তচাপ
১৪০-১৫৯
 অথবা ৯০-৯৯
পর্যায়- ২  উচ্চরক্তচাপ
> ১৬০
অথবা >১০০
        সুত্রঃ মার্কিন জয়েন্ট ন্যাশনাল কমিটির ৭ম রিপোর্ট, ২০০৩।

আমাদের দেশের মানুষের শারীরিক গঠন এবং পরিবেশের ভিন্নতার কারণে উচ্চ রক্তচাপের এই পর্যায় ভাগ হুবহু প্রযোজ্য নাও হতে পারে কিন্তু এখন পর্যন্ত এ সম্পর্কে কেউ তেমন বড় ধরণের গবেষণা করেনি এজন্য আজকাল সবাই মার্কিন শ্রেণী বিন্যাসকেই আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছেন  

উচ্চ রক্তচাপ নির্ণয়ের জটিলতা

আগেই বলা হয়েছে বয়স, লিঙ্গ এবং অবস্থা ভেদে একজন লোকের রক্তচাপের তারতম্য হতে পারে আকস্মিক কিন্তু এ রকম সাময়িক রক্তচাপ বেড়ে যাওয়ার ফলে উচ্চ রক্তচাপ নির্ণয় করা জটিল হয়ে পড়েঅনেকেই চিকিৎসকের কাছে আসলে বেশ নার্ভাস হয়ে যায় কিংবা ঘাবড়ে যায় তখন এদের রক্তচাপ মাপলে বেশী পাওয়া যায়   কিন্তু বাড়ীতে শান্ত পরিবেশে রক্তচাপ মাপলে অমন বেশী হয় না  চিকিৎসকের উপস্থিতিতে এ রকম রক্তচাপ বেড়ে যাওয়া  এজন্য হোয়াইট কোট হাইপারটেনশন নামে পরিচিত
কারও রক্তচাপ মাঝে মাঝে বিরতি দিয়ে কয়েকবার মাপলে প্রথমবারের চেয়ে পরবর্তী ক্ষেত্রে কম পাওয়া যায় একটি পর্যবেক্ষণে দেখা গিয়েছে প্রথমে যাদের ডায়াস্টোলিক চাপ ৯৫ মিঃ মিঃ পারদচাপ পাওয়া গিয়েছিল , কোন ওষুধ পত্র ছাড়াই ৪ থেকে ৬ মাস পরে রক্তচাপ কমে ৯০ মিঃ মিঃ পারদচাপ হয়েছে  একবার মাত্র রক্তচাপ মাপলে ব্রিটেনের তিন ভাগের এক ভাগ লোকের রক্তচাপ ৯০ মিঃ মিঃ পারদচাপের বেশী পাওয়া যায় কিন্তু ছয় বার মাপলে ৫% লোকের রক্তচাপ ৯০ মিঃ মিঃ পারদ চাপের বেশী পাওয়া যায় সুতরাং একবার রক্তচাপ মেপেই কাউকে উচ্চ রক্তচাপের রোগী হিসেবে চিহ্নিত করা ঠিক নয়

No comments:

Post a Comment