রক্ত পরিবহণ ব্যবস্থার আসল কাজ শরীরের প্রতিটি কোষে অক্সিজেন এবং পুষ্টি উপাদান
পোঁছে দেওয়া। এ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেলে কোষ-কলা কয়েক মিনিটের মধ্যে
মরে যায়।
রক্ত পরিবহণ ব্যবস্থার মধ্যমণি হৃদপিণ্ড। সর্বদা স্পন্দনশীল বিস্ময়কর এই রক্ত সঞ্চালক যন্ত্রটি মাতৃগর্ভে ভ্রূণের বয়স
যখন পাঁচ সপ্তাহ, তখনই গড়ে
উঠতে শুরু করে। ভ্রূণের বয়স ৮ থেকে ৯ সপ্তাহ হলে এটি পুরো দমে কাজ শুরু করে দেয়। আর তা চলে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত।
বুকের ঠিক মাঝখানে দুই ফুসফুসের মধ্যে হৃদপিণ্ডের অবস্থান। এটা কলার মোচার মতো দেখতে।এর সরু দিকের বেশির ভাগ অংশ বুকের বাম দিকে থাকে। আকারে এটি
একজন পূর্ণ বয়স্ক মানুষের মুষ্টি বদ্ধ হাতের সমান। লম্বায় ১০ সেন্টি মিটার , আর গড়পড়তা ওজন ২৭০ গ্রাম। হৃদপিণ্ড আসলে পেশীবহুল ফাঁপা অঙ্গ। কিন্তু এর পেশীর বৈশিষ্ট্য শরীরের আর সব ঐচ্ছিক কিংবা
অনৈচ্ছিক পেশী থেকে একেবারেই আলাদা। হৃদপিণ্ডের তিনটি স্তর রয়েছে। হৃদ পেশীর বাইরে পাতলা পর্দার মতো আস্তরণকে পেরিকার্ডিয়াম বলে। পেরিকার্ডিয়াম হৃদপিণ্ডকে শুধু চাদরের মতো ঢেকেই রাখে না, এর সুরক্ষা এবং বিশেষ
আকার সংরক্ষণে সাহায্য করে। পেরিকার্ডিয়ামের নীচে মূল হৃদপেশী বা মায়োকার্ডিয়াম অবস্থিত। এটা পুরু এবং স্বতঃ সংকোচন প্রসারণ ক্ষমতাসম্পন্ন। মায়োকার্ডিয়ামের ভেতরের আবরণীকে এন্ডোকার্ডিয়াম বলা হয়।
হৃদপিণ্ড আসলে একই সমান্তরালে কার্যরত দুটি পাম্পবিশেষ। ডানদিকের পাম্প একটি অলিন্দ একটি নিলয় সমন্বয়ে গঠিত। দেহের সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড সমৃদ্ধ রক্ত ডান অলিন্দে
এসে জমা হয়। ডান অলিন্দ আর নিলয়ের মাঝখানে যে কপাটিকা থাকে তার
নাম ট্রাইকাস্পিড ভাল্ব।
এর মধ্য দিয়ে রক্ত ডান
নিলয়ে যায়। ডান নিলয় থেকে পরিশোধনের জন্য রক্ত ফুসফুসে যায়। ফুসফুস থেকে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত বাম দিকের পাম্প ব্যবস্থায় আসে। বাম দিকের পাম্প বাম অলিন্দ এবং বাম নিলয় সমন্বয়ে গঠিত। বাম অলিন্দ থেকে মাইট্রাল ভাল্বের সাহায্যে রক্ত বাম নিলয়ে আসে। এখান থেকে রক্ত সবেগে মহাধমনী দিয়ে বের হয়ে সমস্ত শরীরে ছড়িয়ে পড়ে।
হৃদপিণ্ড প্রতিনিয়ত তার কাজ করে চলেছে এবং এভাবে সমস্ত শরীরে অক্সিজেন ও পুষ্টি
সরবরাহ করছে। কিন্তু হৃদপিণ্ডের কার্য-ক্ষমতা অব্যাহত রাখার জন্য
হৃদপেশীর পুষ্টি ও অক্সিজেনের রক্ত প্রয়োজন রয়েছে। হৃদপেশী
সেই রক্তের সরবরাহ পায় দুইটি করোনারি ধমনীর মাধ্যমে । ডান ও বাম করোনারি ধমনী তাদের শাখা-প্রশাখার সাহায্যে হৃদপিণ্ডের প্রয়োজনীয় শক্তি
ও পুষ্টি যোগায়।
হৃদপেশীর একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য স্বতঃস্পন্দনশীলতা। অর্থাৎ হৃদপেশী নিজস্ব শক্তিতে উদ্দীপিত
হয়। অলিন্দের ওপরের দিকে সাইনো-অ্যাট্রিয়াল
নোড নামে পরিচিত একটি বিশেষ অংশ থেকে বৈদ্যুতিক উদ্দীপনা প্রথমে সৃষ্টি হয় এবং তা একটি
জটিল জালিকার মতো ছড়ানো পথে সমগ্র হৃদপিণ্ডে বিস্তৃত হয়। এই বৈদ্যুতিক উদ্দীপনার ফলেই হৃদপেশী স্পন্দিত হয়।
আগেই বলা হয়েছে যে হৃদপিণ্ড একই সমান্তরালে কার্যরত দুইটি পাম্প বিশেষ। এখানে ডানদিকের পাম্পকে কম কাজ করতে হয় । কারণ এটা ফুসফুসে রক্ত পাঠায়। এজন্য ডান নিলয়ের পেশী তেমন পুরু নয়। কিন্তু বাম দিকের পাম্পকে বেশী কাজ করতে হয়। এখান থেকে রক্ত সারা শরীরে পাঠাতে হয় এবং সামগ্রিক রক্ত প্রবাহ অনেক বেশী বাধার
মুখোমুখি হয়। এজন্য বাম নিলয় বেশী পেশল , পুরু এবং ভারী। একজন পূর্ণ বয়স্ক মানুষের হৃদপিণ্ড বিশ্রাম রত অবস্থায় প্রতিমিনিটে গড় পড়তা ৭২
বার স্পন্দিত হয়ে ৫/৬ লিটার রক্ত পাম্প করে। অর্থাৎ হৃদপিণ্ড প্রতিদিন
১,০০,০০০ বার স্পন্দিত হয়। সারা
বছরে এটা ৪০ মিলিয়ন বার স্পন্দিত হয়। একজনের জীবনকালে গড়পড়তা
এটি ৩ বিলিয়ন বার স্পন্দিত হয়। আর রক্ত শরীরের কোষ ও কলায় অক্সিজেন ও পুষ্টি পৌঁছে দেওয়ার জন্য বিভিন্ন আকারের
রক্ত নালীর মধ্য দিয়ে ৬০,০০০ মাইল (৯৭,০০০ কিলোমিটার) পথ অতিক্রম করে। অতিরিক্ত পরিশ্রম এবং ব্যায়ামের সময় হৃদপিণ্ডের রক্ত পাম্প করার ক্ষমতা বেড়ে
যায় এবং স্বাভাবিক অবস্থার চেয়ে ৫-৭ গুণ অর্থাৎ ২০ থেকে ৪০ লিটার রক্ত পাম্প করতে পারে।
চমৎকার কলাম , একজন সাধারন পাঠকের জন্য হৃদপিণ্ডের কাজ বোঝার জন্য যথেষ্ট । যেখানে খুব সরল ও বোধগম্য ভাষায় সাবলীল গল্প বলার ছলে পুরো বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে ।
ReplyDeleteআসলেই স্যার অনেক সহজ ভাষায় লিখেছেন।
Deleteধন্যবাদ।
ReplyDeleteঅনেক সুন্দর লেখা। এর থেকে সহজ ভাষায় এত স্বচ্ছ ধারণা দেওয়া বোধ করি সম্ভব নয়।
ReplyDeleteস্যার কে অনেক ধন্যবাদ এমন শুভ উদ্যোগ গ্রহন করার জন্য :]
ReplyDelete